পুলিশের ডাকে ঝর্ণার বড় ছেলে ঢাকায়

| আপডেট :  ২৪ এপ্রিল ২০২১, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ এপ্রিল ২০২১, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্ট কাণ্ডের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সঙ্গীনি জান্নাত আরা ঝর্ণার বড় ছেলে আবদুর রহমান জামিকে খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে পুলিশ। হেফাজতের সাম্প্রতিক সহিং’সতার পর সংগঠনটির নেতাদের বি’রুদ্ধে গ্রে’প্তার অ’ভিযান শুরু হয়েছে সেই রিসোর্টকাণ্ডের পরেই।

মামুনুল স্থানীয়দের দ্বারা অ’বরুদ্ধ হয়ে ঝর্ণাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও তার এই দাবির সত্যতা এখনও প্রশ্নের মুখে। ঝর্ণা বিয়ে করেছিলেন খুলনার কওমি শিক্ষক হাফেজ শহিদুল ইসলামকে। রিসোর্টকাণ্ডের পর তাদের সংসারের বড় ছেলে আব্দুর রহমান জামি ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, তার বাবা-মায়ের সংসারে ভাঙনের পেছনে দায়ী ছিলেন মামুনুল। শহিদুল ইসলাম এর বর্তমান স্ত্রী সালমা সুলতানা জানান, বৃহস্পতিবার এই কি’শোরকে নিয়ে ঢাকায় আসে পুলিশ।

শহিদুল ইসলাম থাকেন নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন শাহীনূর জামে মসজিদ সড়কের একটি বাসায়। শুক্রবার বিকালে বাসায় গিয়ে কেবল তার স্ত্রী সালমাকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আব্দুর রহমান জামিকে পুলিশ ঢাকা যেতে বললে সে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। পরে মাওয়া ঘাট থেকে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়।’ আবদুর রহমানের সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছে, এমন প্রশ্নে সালমা সুলতানা বলেন, ‘পুলিশ ওর আম্মুর সঙ্গে দেখা করাইছে। ওর আম্মুকেও পুলিশ নিতে (পুলিশ হেফাজতে) পারে এটা বলছে।’

তবে বি’ষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারেননি সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক। শহিদুলের স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমানকে পুলিশ ঢাকায় নিয়ে গেছে এমন কোনো তথ্য সোনাডাঙ্গা পুলিশের কাছে নেই।’ ঢাকায় গো’য়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বি’ষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, ‘ছেলেটি এখন ঢাকায় আছে।’ তবে তাকে কেন রাজধানীতে আনা হয়েছে, সে বি’ষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।

গত ৩ এপ্রিল ঝর্ণাকে নিয়ে রিসোর্টে অ’বরুদ্ধ হওয়ার পর তার স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবাকে ফোন করে মামুনুল জানান, তার সঙ্গীনি হাফেজ শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার চা’পে চড়ে তিনি তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে বা’ধ্য হয়েছেন। সেই ঘটনার পর ঝর্ণার বাড়ি, তার বিয়ে, বিচ্ছেদের বি’ষয়টি নিয়ে জানাজানি হয়। মামুনুল দাবি করেছেন, ওই বিচ্ছেদের পর তিনি ঝর্ণাকে মানবিক কারণে বিয়ে করেছেন আর শহিদুল ইসলামকে নিজেই আবার বিয়ে দিয়েছেন। ঝর্ণা খুলনা থেকে ঢাকায় আসার পর ধানমন্ডিতে একটি বিউটিপার্লারে কাজ করতেন। তিনি রিসোর্টকাণ্ডের আগ পর্যন্ত নর্থ সার্কুলার রোডে একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকতেন।

রিসোর্টকাণ্ডের পরও আবদুর রহমান ঢাকায় আসে একবার। তিনি ওই বাসা থেকে তার মায়ের হাতে লেখা একটি ডায়েরি খুঁজে পেয়ে সংবাদ মাধ্যমকে দেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঝর্ণা লিখেছেন, মামুনুলের সঙ্গে তার একটি চুক্তি হলেও তিনি তা ভঙ্গ করেছেন। আবদুর রহমান বলেছেন, এই লেখনিই প্রমাণ হয় যে মামুনুল তার মাকে কথা দিয়েও বিয়ে করেননি। গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর পল্টন থানায় সেই ডায়েরির নিরাপত্তা ও মায়ের সন্ধান চেয়ে সাধারণ ডায়েরিও করে এই কি’শোর। পরে সে ফিরে যায় খুলনায় বাবার কাছে।

গত ১৮ এপ্রিল গ্রে’প্তার হওয়ার পর মামুনুলের সঙ্গে এই বি’ষয়টি নিয়েও প্রশ্ন রেখেছে পুলিশ। তাকে গ্রে’প্তার করা ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামুনুল দাবি করেছেন, তিনি ঝর্ণা ছাড়াও জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি নামে আরও এক নারীকে বিয়ের দাবি করেছেন। তবে এই বিয়ের কোনো কাবিন নেই।

পুলিশের বরাত দিয়ে আরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে যে, মানুনুল চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করেছেন। তবে এই চুক্তিভিত্তিক বিয়ের কোনো ব্যাখ্যা পুলিশ বা মামুনুলের পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। রিসোর্টকাণ্ডের রাত মামুনুল তার ৪ ভাইকে নিয়ে লাইভে এসে দাবি করেন, ঘরোয়া পরিবেশে তিনি পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছেন।

তবে ওই দিন তার স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবা মোহাম্ম’দপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এর ১নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ি ছেড়ে চলে যান স’ন্তানদের নিয়ে। তিনি দুই সপ্তাহেও বাসায় ফেরেননি।