হেফাজতের আরও ২৫ নেতা ‘নজরদারিতে’

| আপডেট :  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০৫:০৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৫৯ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বি’রোধিতার নামে আন্দোলনে গত মার্চে দেশব্যাপী সহিং’সতায় জড়িয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।

ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে সহিং’সতায় জ’ড়িতদের তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করেছে এলিট ফোর্স র‌্যা’ব। এরই মধ্যে সংগঠনটির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রে’ফতারও করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনায় সরাসরি ও উসকানি দেয়ায় জ’ড়িত অন্যরাও ‘গো’য়েন্দা নজরদারিতে’ রয়েছেন।

র‌্যা’ব সূত্র বলছে, সহিং’সতায় জড়ানো অ’পরাধীদের শনাক্তে র‌্যা’বের গো’য়েন্দা বিভাগ অ’ভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের আ’টক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যা’ব প্রথমে অ’ভিযান চা’লিয়ে হেফাজতের হরতালে ঘোড়ায় চড়ে পিকেটিং করা যুবক হাছান ইমামকে গ্রে’ফতার করে। পরে ধর্মীয় আয়োজনে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় অ’ভিযুক্ত ‘শি’শুবক্তা’খ্যাত রফিকুল ইসলামকেও র‌্যা’ব গ্রে’ফতার করে আইনের আওতায় আনে।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হক নারীসহ অ’বরুদ্ধ হওয়ার সময় যে হা’মলা, ভা’ঙচুর ও না’শকতা হয়েছিল, সে ঘটনায় হওয়া মা’মলার প্রধান আ’সামিসহ সংগঠনের চার নেতাকেও জুরাইন এলাকা থেকে গ্রে’ফতার করে র‌্যা’ব। বাহিনীটির কর্মকর্তারা বলছেন, যারাই সহিং’সতায় জ’ড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নজরদারিতে থাকা হেফাজত নেতাদের অধিকাংশই ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের তা’ণ্ডবসহ সহিং’সতার ঘটনায় কোনো না কোনো মা’মলার আ’সামি। নরেন্দ্র মোদির সফরের বি’রোধিতা করে বি’ক্ষো’ভকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিং’সতার মা’মলায়ও অনেকে আ’সামি। ওই তিনদিনের সহিং’সতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭৭টি মা’মলা হয়েছে। তাতে আ’সামি ৪৯ হাজারের বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৫০ জনের বেশি আ’সামিকে গ্রে’ফতার করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, হেফাজতের মধ্যে এখনো সক্রিয় রয়েছেন- এমন ৩০ জন নেতার একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের গো’য়েন্দা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচজন গ্রে’ফতার হয়েছেন। বাকি ২৫ জনের ও’পর কড়া নজরদারি রয়েছে। এসব নেতারা সবাই ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার কোনো না কোনো মা’মলার আ’সামি। পর্যায়ক্রমে তাদের গ্রে’ফতার করা হতে পারে।

যদিও স’রকারের ক’ঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতের শীর্ষ নেতারা এখন সমঝোতার পথ খুঁজে ফিরছেন। গত ২০ এপ্রিল রাতে স্ব’রা’ষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসভবনেও যান দলটির ১০ নেতা। হেফাজতের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের মহাস’চিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, তাদের আর কোনো নেতাকে যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রে’ফতার না করে।

তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, সম্প্রতি হেফাজতের কয়েকজন নেতাকে গ্রে’ফতারের পর না’শকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে পুরনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে ছড়ানো হয়েছে। যারা এটি করেছে, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের বি’রুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

র‌্যা’বের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, কোনো দল কিংবা গোষ্ঠী—যারা না’শকতার চেষ্টা করেছে কিংবা না’শকতার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে, সবাইকেই ধাপে ধাপে র‌্যা’ব গ্রে’ফতার করবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রে’ফতারকৃতদের বেশিরভাগেরই দেশের বিভিন্ন জে’লায় না’শকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ না’শকতা সৃষ্টির জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।

র‌্যা’বের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী যে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছিল, ঠিক তখন থেকেই একটি কুচ’ক্রি মহল দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন ধরনের না’শকতামূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। র‌্যা’ব এসব ব্যক্তি বা দলকে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে। এসব অ’পরাধী শনাক্তে র‌্যা’বের গো’য়েন্দা শাখা অ’ভিযান অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রে’ফতারের পর না’শকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন পুরোনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে গুজব রটানোয় জ’ড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যারা র‌্যা’বের হাতে গ্রে’ফতার হয়েছেন, তাদের সঙ্গে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, জানতে চাইলর কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যা’ব কোনো দল কিংবা ব্যক্তিকে টার্গেট করে অ’ভিযান পরিচালনা করে না। যারা দেশব্যাপী না’শকতা সৃষ্টি করেছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে এবং যারা রাষ্ট্রবি’রোধী বক্তব্য দিয়েছে, তাদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

‘যাদের গ্রে’ফতার করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই নিজেদের শক্তি জানান দেয়া এবং রাজনৈতিক পরিচয়টাকে জানান দেয়াই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তারা ঢাল-তলোয়ার হিসেবে বিভিন্ন মাদরাসা বা এতিমখানার কোমলমতি শি’শুদের ব্যবহার করেছে’—যোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহম’দ শফীর মৃ’ত্যুর পর সংগঠনটির ও’পর স’রকারের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, তা এখন আর নেই। হেফাজতের নতুন আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ শীর্ষ নেতারা কথায় কথায় স’রকারের বি’রোধিতা করেন। গত নভেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বি’রোধিতা করার পর বি’ষয়টি অনেক স্পষ্ট হয়।

এরপর চলতি বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বি’রোধিতা করে আন্দোলনের নামে সহিং’সতায় লিপ্ত হয় হেফাজত। তবে গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা মামুনুল হক তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে ধরা পড়লে এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজত নেতাকর্মীরা ভা’ঙচুর চালালে নড়েচড়ে বসে স’রকার।