তদন্তে মিলেছে মামুনুলের ‘চতুর্থ বিয়ের বিষয়ে ‘কিছু তথ্য’

| আপডেট :  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০১:৪০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০১:৪০ অপরাহ্ণ

ঢাকা মহানগর গো’য়েন্দা পুলিশের কাছে রি’মান্ডে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাস’চিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকের ‘চতুর্থ বিয়ে’র বি’ষয়েও ‘কিছু তথ্য’ মিলেছে। এছাড়া মামুনুলসহ হেফাজত নেতাদের পরিচালিত মাদরাসাগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাবে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্ম’দপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রে’ফতার করা হয়। ১৯ এপ্রিল তাকে একটি মা’মলায় সাত দিনের রি’মান্ডে নেয়া হয়।পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তা’ণ্ডবসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১৭টি মা’মলা রয়েছে মামুনুল হকের বি’রুদ্ধে। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরবি’রোধী আন্দোলনের সময় সহিং’সতার মূলহোতা হিসেবেও মামুনুলের বি’রুদ্ধে একাধিক মা’মলা রয়েছে।

ত’দন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, রি’মান্ডে মামুনুলকে মা’মলা সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করা হলেও ঘুরে-ফিরে আসছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে না’শকতাসহ বেশ কয়েকটি সহিং’সতার ঘটনা। এসব বি’ষয়েও জি’জ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে। সাত দিনের রি’মান্ডের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) জি’জ্ঞাসাবাদে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, মামুনুলকে পুলিশের একাধিক ইউনিট বিভিন্ন মা’মলায় জি’জ্ঞাসাবাদ করেছে। রি’মান্ডে আনার পর মোহাম্ম’দপুর থানা পুলিশ তাকে জি’জ্ঞাসাবাদ করছে। তবে ত’দন্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রসঙ্গক্রমে ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চে হেফাজতের না’শকতার বি’ষয়টি উঠে আসে।ত’দন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা রি’মান্ডে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘স’রকারের শীর্ষ মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে সমালোচনা করছেন, তাদের ‘জু’তাপেটা’ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সেকথাগুলো ওয়াজ মাহফিলে বলে এবং বিভ্রান্তিকর বার্তা দিয়ে কওমি মাদরাসার কোমলতি শি’শুদের আ’ক্রমণাত্মক করেছেন। এই ঘটনার দায় তো আপনি এড়াতে পারেন না। আপনার উ’সকানিতে না’শকতাগুলো হয়েছে’। জবাবে মামুনুল হক বলেন, ‘যেহেতু আমি নেতা, আমি তো দায় এড়াতে পারিই না’।

সূত্র জানায়, রি’মান্ডে মামুনুলের কাছে তার পারিবারিক জীবন, শিক্ষকতাসহ নানা বি’ষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পুলিশের সব প্রশ্নে অকপটে উত্তর দিয়েছেন মামুনুল। কোনো প্রশ্ন তাকে দুইবার জিজ্ঞেস করতে হয়নি।গো’য়েন্দা সংস্থার একটি ইউনিট জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তারা মামুনুল হকের বি’ষয়ে ছায়া ত’দন্ত করছে। ত’দন্তে তারা মামুনুলের ‘চতুর্থ বিয়ে’র বি’ষয়ে ‘কিছু তথ্য’ পেয়েছে। তবে সে বি’ষয়ে এখনই সরাসরি বক্তব্য দিতে চাইছে না তারা।

রি’মান্ডে জি’জ্ঞাসাবাদের বি’ষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও ত’দন্তের বি’ষয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ মানুষকে উসকানি, স’রকারকে বিদায় করা, মন্ত্রীদের কটূক্তি করার বি’ষয়গুলো নিয়ে আমরা ত’দন্ত করছি। এছাড়া এসব কাজে তাকে (মামুনুল) দেশ বা দেশের বাইরে থেকে কেউ প্যাট্রোনাইজ (পৃষ্ঠপোষকতা) করছে কি-না, অর্থ দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানানোর প্রচেষ্টা হচ্ছে কি-না, সবকিছুই আমাদের ত’দন্তে আসবে।মাদরাসা পরিচালনায় আয়-ব্যয়ে অনিয়ম

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, মামুনুল হকসহ হেফাজতের ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিচালিত কওমি মাদরাসায় ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে ত’দন্ত দল।ত’দন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতে ইসলামে খেলাফতে মজলিসের বেশ কিছু নেতা রয়েছেন। এই দুই দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

তাদের মধ্যে একজন ছিলেন খেলাফতে মজলিসের আমির আল্লামা আজিজুল হক। তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে মোহাম্ম’দপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার দায়িত্ব নেন। তবে আ’দালত যখন মাদরাসাটির জন্য একটি স্বতন্ত্র বোর্ড করতে বলেন এবং এটি নিশ্চিত করতে একজন ম্যা’জিস্ট্রেট নিয়োগ করেন, তখন আজিজুল হক মাদরাসাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন তার ছেলে মামুনুল হককে।

সূত্র জানায়, মামুনুলসহ হেফাজতের নেতারা এভাবে যাত্রাবাড়ী, বারিধারা, লালবাগের বেশ কয়েকটি মাদরাসা পরিচালনা করছেন। এসব মাদরাসার আয়-ব্যয়ে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। এসব মাদরাসায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব অনুদান এসেছে, সেগুলোর বিস্তারিত তথ্যাদিও নেই। পাশাপাশি মাদরাসাগুলো অ’বৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ নিয়ে বছরের পর বছর বিল পরিশোধ না করেই পরিচালনা করা হচ্ছে।

শক্ত প্রমাণাদি পেলে এসব বি’ষয়েও মা’মলা করবে পুলিশ।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এ সফরের বি’রোধিতায় বিভিন্ন জায়গায় বি’ক্ষো’ভ করে হেফাজত। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বি’ক্ষো’ভ থেকে সহিং’সতাও হয়। পরে এর জেরে হরতাল ডাকে হেফাজত। এসব সহিং’সতায় বেশ কিছু প্রা’ণ ঝরে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থানকালে অ’বরুদ্ধ হন মামুনুল হক। ওইদিন তিনি পুলিশের জি’জ্ঞাসাবাদে জানান, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। যদিও পরে তার দ্বিতীয় বিয়ের বি’ষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।অ’বরুদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই হেফাজত নেতারা ওই রিসোর্টে লা’ঠিসো’টা নিয়ে ব্যাপক ভা’ঙচুর ও না’শকতা চা’লিয়ে মামুনুলকে নিয়ে যান।

পুলিশের ও’পর হা’মলা ও রিসোর্টে ভা’ঙচুরের অ’ভিযোগে ওই ঘটনায় একাধিক মা’মলা হয়, যেখানে মামুনুলকে আ’সামি করা হয়।পরে মোহাম্ম’দপুর থানায় দা’য়ের করা এক সাধারণ ডায়েরিতে (জি’ডিতে) মামুনুলের তৃতীয় বিয়ের খবর পাওয়া যায়।